পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যেসব বিশ্বনেতার সাক্ষাৎ হয়েছে, তারা সবাই তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও কুশলতায় মুগ্ধ হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘ওয়ার্ল্ড লিডার্স অন বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ১৭-২৬ মার্চ ১০ দিনব্যাপী ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বিশ্বনেতাদের ২৩২টি বক্তব্য ও বাণী সংকলন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে।

অনুষ্ঠানে ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুকে শুধু বাংলাদেশের জনগণই ভালোবাসতেন— এমন নয়, বিশ্বমঞ্চেও তার অনেক বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। তিনি সারা বিশ্বে অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই বইয়ে (ওয়ার্ল্ড লিডার্স অন বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড বাংলাদেশ) বিশ্বনেতাদের বক্তব্য ও বাণীগুলোর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, বিশ্বনেতারা তাদের বক্তব্য ও বাণীতে বঙ্গবন্ধুর ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্ব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের ১১ লক্ষাধিক নাগরিককে মানবিক আশ্রয় দেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে যে কোনো সমস্যা সমাধানের মতো অর্জনগুলোর জন্য শেখ হাসিনার সরকারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। ড. মোমেন আরও বলেন, এই গ্রন্থের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বনেতাদের মূল্যায়ন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও জানতে পারবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের শান্তিকেন্দ্রিক এবং উন্নয়নমুখী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও সফলতায় বিশ্বনেতাদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা ও স্বীকৃতি এই গ্রন্থে উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের বক্তব্য ও বাণীর এই সংকলন গবেষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে সমাদৃত হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বইটির প্রথম অধ্যায়ে ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে সশরীরে যোগদানকারী ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ, নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারি ও শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের ভাষণ, দ্বিতীয় অধ্যায়ে বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো মোট ১৬৯টি বাণী, তৃতীয় অধ্যায়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের নেতাদের পাঠানো ১৩টি বাণী, চতুর্থ অধ্যায়ে ৩৫টি ভিডিও মেসেজের ট্রান্সক্রিপ্ট এবং পঞ্চম অধ্যায়ে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের পাঠানো ১০টি বাণী রয়েছে। এসব ভাষণ ও বাণীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি বিশ্বনেতাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে। একই সঙ্গে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্জনসমূহেরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। অনুষ্ঠানে এএসএম শামসুল আরেফিন সম্পাদিত ‘বাংলাদেশ অ্যাট ফিফটি’ এবং সত্যম রায় চৌধুরী সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু ফর ইউ’ বই দুটিরও মোড়ক উন্মোচন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন কূটনৈতিক উইংয়ের মহাপরিচালক হারুন আল রশিদ। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্সের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম, সচিব (পশ্চিম) সাব্বির আহমেদ চৌধুরী, সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের প্রধানরাও অনুষ্ঠানে যোগ দেন।